সীমান্তের কাটলা বাজারের ফুটপাতে দৈনিক ১০ মণ রসগোল্লা বিক্রি

সীমান্তের কাটলা বাজারের ফুটপাতে দৈনিক ১০ মণ রসগোল্লা বিক্রি

মোঃমোমিনুল ইসলাম
স্টাফ রিপোর্টার (দিনাজপুর )

দিনাজপুরের বিরামপুরে সীমান্তের কাটলা বাজারের প্রধান গলিতে অসংখ্য মানুষের ভিড়। সবার উদ্দেশ্য রসগোল্লা কেনা। কথা হলো নার্গিস বেগমের সঙ্গে। তিনি এসেছেন জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার রতনপুর থেকে যাবেন আত্মীয়র বাড়িতে। তিনি বলেন, কাটলা বাজারের মিষ্টি অনেক ভালো এবং দামেও কম তাই তিনি এখান থেকে মিষ্টি কিনছেন আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য।

বিরামপুর পৌরশহর থেকে বিয়ে বাড়ির জন্য রসগোল্লা কিনতে এসেছেন মোহাম্মদ দুলাল হোসেন। বিয়েতে বরযাত্রীদের জন্য ৪০ কেজি রসগোল্লা কিনেছেন। শহরের বাজারের চেয়ে দামে সাশ্রয় ও গুণগত মানের হওয়ায় প্রতিদিন অনেক দূর দূরান্ত থেকে ক্রেতারা আসেন রসগোল্লা কিনতে। বাজারের ফুটপাতে বসা এসব দোকানে প্রতিদিন প্রায় ১০ মণ রসগোল্লা বিক্রি হয়।

দুলাল হোসেনের মত অসংখ্য ক্রেতা রসগোল্লা কিনতে আসেন দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী কাটলাবাজারে। এ বাজারে কাটলা হাইস্কুল সংলগ্ন পূর্বপাশে বাজারের প্রধান রাস্তা। এ রাস্তার ফুটপাতের লম্বা সারিতে রয়েছে ৫টি দোকান। ফুটপাতে বসা এসব দোকানদার দিনের বেলা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রসগোল্লার দোকানদার। আর সন্ধা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তাঁরা সকলেই মিষ্টি তৈরির দক্ষ কারিগর।

ফুটপাতে এসব রসগোল্লা দোকানদারদের মধ্যে আছেন মনির হোসেন, সাজদার হোসেন, রেজাউল করিম, হেসাব আলী ওরফে পোকা ও গিয়াস উদ্দিন। রাস্তার পূর্বপাশে ফুটপাতে বসেন রসগোল্লার দোকানদার মোমিন হোসেন। রাস্তা থেকে পূর্বদিকে আরেকটি গলিতে ফুটপাতে মিষ্টির দোকান নিয়ে বসেন হাবিবুর রহমান। এছাড়াও বাজারের বিভিন্ন গলিতে রয়েছে ছোটবড় ৬ মিষ্টির দোকান।

বাজারের প্রধান গলিতে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত চলে ফুটপাতে বসা রসগোল্লার এ দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভীড়। উপজেলা ও উপজেলার বাহির থেকে ক্রেতারা এখানে আসেন রসগোল্লা কিনতে। বিয়ে, বৌভাত, আকিকা, জন্মদিন, আত্মীয়ের বাড়িতে দাওয়াত, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন সাংগঠনিক অনুষ্ঠানের জন্য সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন গ্রাম ও শহরের মানুষ এখান থেকে মিষ্টি কেনেন।

ফুটপাতে বসা প্রতিটি দোকানে প্রতিদিন এক থেকে দেড় মণ করে রসগোল্লা বিক্রি হয়। রসগোল্লার পাশাপাশি একেকজন দোকানদার ২০ থেকে ৩০ কেজি দই বিক্রি করেন।

কাটলা বাজারের এসব ফুটপাতের দোকান থেকে ভালো মানের প্রতিকেজি রসগোল্লা ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হয়। তবে, যেসব ক্রেতার সঙ্গে দোকানদারের সম্পর্ক ভালো তারা অনেকসময় কেজিতে ১০ টাকা কম দিয়েও কেনেন।

এখানকার রসগোল্লা নামে রসগোল্লা হলেও গামলায় রস নিংড়িয়ে অনেকটা শুকনো করে সেই রসগোল্লা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন দোকানদারেরা। এতে করে অন্য বাজারে যেখানে প্রতিকেজি রসগোল্লা একশো থেকে দেড়শো গ্রাম রস দেয়া হয়, সেক্ষেত্রে কাটলা বাজারের এসব দোকানে রসগোল্লাতে রসের ঝামেলা নেই বললেই চলে।

এতে করে ক্রেতাদের অনেকটাই সাশ্রয় হয়। এছাড়া দূরদূরান্তে রসগোল্লা বহন করাটাও অনেক সহজ ও ঝুঁকিমুক্ত হয়- এমনটাই জানালেন হাকিমপুর উপজেলার সাতকুড়ি গ্রাম থেকে রসগোল্লা কিনতে আসা অলিউল্লাহ আলী।

কাটলা বাজারের ফুটপাতে রসগোল্লা বিক্রি করেন সাজদার হোসেন । বিশ বছরের পুরনো মিষ্টি ব্যবসায়ী। ১৫ বছর বয়সে তার প্রতিবেশীর কাছ থেকে মিষ্টি বানানো ও ব্যবসা শিখেছেন। পরে দই বানানো ও দই বিক্রিও শুরু করেন। এই ব্যবসা করেই তিনি তার জীবিকা নির্বাহ ও ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করান। এই ব্যবসার ওপর নির্ভর করে বাড়িঘর তৈরি ও কিছু আবাদী জমিও কিনেছেন।

সাজদার হোসেন বলেন, এক মণ রসগোল্লা তৈরি করতে ৫২ কেজি চিনি , দেড় মণ দুধ , দেড় কেজি ময়দা ও এক মণ খড়ি (৩০০ লাগে। তবে, এক মণ রসগোল্লা তৈরি করতে যে পরিমাণ চিনি লাগে সেগুলোর রস তৈরি করার পর প্রায় ১২ থেকে ১৫ কেজি রস বেঁচে যায়। সেগুলো পরেরদিন কাজে লাগাই।

আমার দোকানে প্রতিদিন এক থেকে দেড় মণ রসগোল্লা বিক্রি হয়। খরচ বাদে এক মণ রসগোল্লা বিক্রি করে ৮০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা লাভ হয়। তবে, সাপ্তাহিক হাটবার শুক্রবার ও সোমবার বারে বেশি পরিমাণে রসগোল্লা বিক্রি হয়। সেদিন লাভের পরিমাণও বেশি হয়। এছাড়া, প্রতিকেজি (এক ডুঙি) দই ১৬০ টাকা দরে ৪০ কেজি দই বিক্রি করলে সেখান থেকে প্রায় এক হাজার টাকা লাভ হয়।

কাটলা হাট-বাজার বণিক কমিটির সভাপতি ও মিষ্টি ব্যবসায়ী কোবাদ হোসেন বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা এখানকার দোকানে দই ও রসগোল্লা কিনতে আসেন। বিভিন্ন বাজারের হোটেল ব্যবসায়ীরা আসেন পাইকারি মিষ্টি ক্রয় করতে।

এখান থেকে নিয়ে গিয়ে তারা খুচরা বিক্রি করেন তাদের এলাকায়। ভালো মানের, দামে তুলনামূলক কম ও রসগোল্লায় রস একেবারেই কম দেওয়ার কারণে ফুটপাতের এসব দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বেশি। ফুটপাতের এসব দোকান থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০ মণ রসগোল্লা ও ৫ মণ দই বিক্রি হয়।

বিরামপুরে ভূয়া ব্যাংক কর্মকর্তা আটক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *