আগের একটি পোস্টে (আমার ভালোবাসার মানুষ) আপনাদের সাথে আমি শেয়ার করেছি যে, আমি অনার্সে ভর্তি না হয়ে ডিগ্রিতে ভর্তি হয়েছিলাম। এর পেছনে যথেষ্ট কারণ ছিল। সেটা অন্যদিন শেয়ার করবো। আজ শেয়ার করবো ডিগ্রি পরীক্ষার সময়ের একটি বিশেষ দিন।
আমার গ্রাম থেকে আমি আর আমার দূর সম্পর্কের মামাতো ভাই একসাথে ডিগ্রিতে পড়াশোনা করতাম। ওর নাম ছিল জাহাঙ্গীর। একসাথেই যেতাম এবং একসাথেই ফিরতাম। দেবীগঞ্জ থেকে চলে যেতাম পঞ্চগড়। সেখানেই আমাদের পরীক্ষা হতো।
তখন সম্ভবত ডিগ্রি সেকেন্ড ইয়ারের পরীক্ষা। অন্যান্য সময়ের মতো সেদিনও পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম। অন্তত পরীক্ষার ৩০ থেকে ৪০ মিনিট আগে আমরা পৌঁছে যাই। তারপর বাইরে একটু গল্প ও পড়াশোনা করি, এরপর পরীক্ষার হলে চলে যাই।
সেদিন ছিল ইংরেজি পরীক্ষা। আমি সামনের বেঞ্চেই সিট পেয়েছিলাম। আমি মুখস্থ কম লিখতাম, সৃজনশীল আকারে বেশি লিখতাম। তখন সৃজনশীল পদ্ধতি ছিল স্কুল-কলেজে। আমি যথারীতি ৩ বা ৪টি প্রশ্নের উত্তর লিখেছিলাম। ওই সময় আমার রুমের দায়িত্বে যে ম্যাডাম ছিলেন, তিনি আমার কাছে আসলেন। আমার খাতার দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন। তারপর আমার খাতাটা নিলেন। হাতের লেখা যে অসাধারণ, তার গুণগান করলেন। পাশের রুমের স্যারকেও দেখালেন।
আমাকে অনেক বাহবা দিলেন। আমি অনেকটা লজ্জায় পড়ে গিয়েছিলাম। অবশ্য প্রায় পরীক্ষাতেই সবার আগে পরীক্ষা শেষ করে বেরিয়ে পড়তাম। তো সেদিন ম্যাডাম আমাকে একটু বেশিই ভালোবাসা দিয়ে ফেলেছিলেন। এরপর আবার আমাকে আমার খাতাটা দিলেন, এবং আমি বাকি প্রশ্নগুলোর উত্তর করলাম।
আসলে এটা আমার কাছে স্মরণীয়। এটা বিশেষ একটি দিন। এই দিন আমি অনেকটা অনুপ্রাণিত হয়েছি। বাস্তবে আমি জীবনে যত লেখা লিখেছি, এত লেখা সম্ভবত খুব বেশি ছাত্রছাত্রী প্র্যাকটিস করে না। প্রচুর লিখেছি। যেটা পড়েছি সেটাই লিখেছি। এ কারণেই যেকোনো ধরনের লেখা আমি মুহূর্তের মধ্যে কপি করে ফেলতে পারি।
আবার ইংরেজি পরীক্ষার দিনেও একই ঘটনা ঘটেছিল। আমার খাতা নিয়ে ম্যাডাম আরও বেশ কয়েকজন স্যারকে দেখান। আমাকে খুব খুব মোটিভেশন দেন। আমি সেদিন অভিভূত হয়েছিলাম। নিজের মধ্যে অনেকটা অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম।
যে কলেজে পরীক্ষা দিয়েছিলাম, ওই কলেজেরই শিক্ষক ছিলেন সেই ম্যাডাম। প্র্যাকটিস বেশি বেশি করলেই হাতের লেখা সুন্দর হয়ে যায়। এটা আহামরি কঠিন কিছু নয়। তবে দ্রুত লিখতে পারার সক্ষমতা থাকতে হবে। আপনার হাতের লেখা সুন্দর, কিন্তু যদি ধীরগতির হয়, তাহলে আবার সমস্যা।
তো যাই হোক, ডিগ্রিতে আমি প্রথম বিভাগ পেয়েছি। আমার সিজিপিএ ছিল ৩.২৬। আমি আমার কলেজে রেজাল্টের দিক থেকে ২য় হয়েছিলাম। ডিগ্রির ৩ বছরের মধ্যে প্রথম ২ বছর কোনো বই-ই পড়িনি। বই কেনাও হয়নি। আর তৃতীয় বর্ষে পরীক্ষার কয়েক মাস আগে বই কিনেছিলাম। যাই হোক, সবকিছুর জন্য আলহামদুলিল্লাহ। তবে বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় জীবনে এই সিজিপিএগুলোর তেমন কোনো গুরুত্ব আসলে নেই।


