আমার ভালোবাসার মানুষের গল্প

ভালোবাসার গল্প

আমি আজগর আলী। আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে এমন সবকিছু ধীরে ধীরে এই ওয়েবসাইটে আপলোড হবে টেক্সট আকারে। আমি নিজেও যেন ভবিষ্যতে পড়তে পারি এবং মানুষকে অভিজ্ঞতার আলোকে জীবনাদর্শন শেয়ার করতে পারি। এর চেয়ে বেশি কিছু ইচ্ছা নেই আমার। তো যাই হোক, চলুন শুরু করি।

আমি যখন তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি তখন রুমানা নামের একটি মেয়ে আমার সাথেই পড়তো। দেখতে ফর্সা, ছিমছাম সুঠাম দেহের অধিকারী, বেশ লম্বা। এককথায় সে দেখতে বেশ সুন্দরী ছিল। তখন তাকে মাঝে-মধ্যেই দেখতাম। ভালো লাগতো এর চেয়ে বেশি কিছু নয়। আর যেহেতু তৃতীয় – পঞ্চম শ্রেণীর ঘটনা এটা, তখন কি-ই-বা  আর বুঝি ভালোবাসা নিয়ে। কিন্তু সত্য কথা হচ্ছে, তার মুখটা আমি মাঝে-মধ্যে দেখতাম। ভালো লাগতো। একসাথে স্কুলে যেতাম আবার আসতাম। ও মানুষ হিসেবে ভালো ছিল। সবার সাথেই কথা বলতো, মিশতো। অহংকার তেমন ছিলো না।

সেই মেয়ে আমার সাথে ক্লাস নাইন পর্যন্ত পড়েছে। ক্লাস টেনেই তার বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু ক্লাস সিক্স বা আপার ক্লাসগুলোতে তার প্রতি কোন মায়ায় আমি আসক্ত হইনি। ভালো লাগার যে বিষয়টা বললাম সেটা ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত-ই সীমাবদ্ধ ছিল।

ক্লাস সিক্সে উঠার পর শুরু হলো আমার নতুন জীবন। তখন সবাই নতুন বন্ধু-বান্ধবী। প্রাইমারী স্কুলের কয়েকজনকে একসাথে পেয়েছিলাম যার মধ্যে রুমানা’ও ছিলো। আমার হাই স্কুল ছিল খুটামারা মির্জা গোলাম হাফিজ উচ্চ বিদ্যালয়। আমার বাসা থেকে প্রায় ১.৫ কিলোমিটার দূরে। বাসা থেকে বেশিরভাগ সময় হেঁটেই যেতাম আবার হেঁটেই আসতাম। তখন ওই ক্লাসে খুটামারা থেকে ৪ জন মেয়ে একসাথে আসতো। সবাই বেশ সুন্দর। সবাই আমার সাথেই পড়তো।

ওদের মধ্যেও রুমানা নামের একজন ছিলো। ছিমছাম, সুঠাম দেহের অধিকারী। বেশ সুন্দর। কথাগুলোও সুন্দর। ওকে আমার সত্যিই ভালো লেগে গেলো। মন থেকে অনুভব করলাম ভালোবাসা। ওকে যেন আমি সত্যিই ভালোবেসে ফেললাম। ক্লাস সিক্সে উঠেছি প্রায় ১ মাস হলো। এর মধ্যেই রুমানাকে একদিন আমি ডেকে বসি আর কথা বলি। সেও খুব লজ্জা আর ভয় নিয়ে আমার সাথে কথা বলেছিল।

রুমানা’রা ছিল ৩ ভাইবোন। দুই বোন এবং এক ভাই। রুমানা সবার বড়। তার ছোট তার বোন এবং সবার ছোট ভাইটি। ওর বাবা ঢাকায় থাকতো। একটি গার্মেন্টস-এ ভালো পজিশনে চাকরি করতো। আমি সম্পর্ক থাকাকালীন এইটুকু জেনেছি।

তো একটু একটু করে ওর সাথে আমার কথা শুরু হলো। ক্লাসের সবাই আমাকে ‘আজগর ভাই’ বলে ডাকতো। শুধু নাম ধরে কেউ-ই ডাকতো না। এটা আমার প্রতি তাদের একটা আলাদা ভালোবাসা ছিল। সেই হিসেবে রুমানার সাথে যেহেতু আমার সম্পর্ক – ওকেও সবাই বেশ সম্মান করেই কথা বলতো। ক্লাসে আমরা দুজন-দুজনকে কতোবার দেখতাম তার হিসেব নেই। আমি সবসময়ই ফাস্ট বয় ছিলাম। ছাত্রী হিসেবে রুমানাও বেশ ভালো ছিল। রোল নম্বর ৫ থেকে ১০ এর মধ্যে থাকতো।

টিফিন টাইমে আমরা জানালায় গিয়ে কথা বলতাম। আমি রুমের ভেতরে থাকতাম আর রুমানা বাইরে দিয়ে জানালায় আসতো। ৩০ মিনিট কিংবা আরও বেশি সময় ধরে আমাদের কথা চলতো। ধীরে ধীরে স্কুলের সবাই আমাদের সম্পর্ক জেনে গেল। সব শিক্ষক’রাই আমাদের বিষয়টা জেনে গেল। কিন্তু ওইভাবে কেউ কোনদিন কিছু বলেনি। এটাও আসলে আমার প্রতি তাদের ভালোবাসা। আমি তো শুধু একটু কথাই বলেছি, এর চেয়ে বেশি আর কিছুই নয়।

এখনকার দিনের প্রেম-ভালোবাসা মানেই তো শারীরিক সম্পর্ক। দুই দিন যেতে না যেতেই ডেটিং-এ যেতে হয়। আরও কত কিছু। সেই তুলনায় আমাদের ভালোবাসা ছিল খুবই পবিত্র। আমার আর ওর সম্পর্ক ছিল প্রায় ৭ বছর। এর মধ্যে ওর হাতটা পর্যন্ত আমি কোনদিন ধরিনি। কোন ধরণের খারাপ কথা-বার্তা হয়নি।

আমরা প্রচুর পরিমাণে চিঠি আদান-প্রদান করতাম। বাসায় লিখে নিয়ে আসতাম, তারপর কোন বান্ধবীর মাধ্যমে ওর কাছে দিতাম। সেও সেইম একই কাজ করতো। শুধু চিঠিই না, ৫ টাকা দামের খাতা চিঠি হিসেবে ব্যবহার করতাম। সেই খাতার সবগুলো পৃষ্ঠায় লিখতাম আর তারপর তাকে দিতাম। বিভিন্ন প্রশ্ন লিখে রাখতাম এবং তাকে উত্তর দিতে বলতাম। রুমানা উত্তর লিখে আবার আমার কাছে দিয়ে দিতো। নিখুৎ ভালোবাসা ছিল আমাদের।

তখন মোবাইল ফোন খুব বেশি এভেইল্যাবল ছিলো না। সবার হাতে স্মার্ট ফোন ছিলো না। হয়তো ফিচার ফোনগুলো কারও কারও বাসায় পাওয়া যেত। ওদের বাসায় ফোন ছিল এবং আমাদের বাসায়ও আমার ভাইয়ের ফোন ছিল। স্কুল যখন ছুটি থাকতো (বেশ কয়েকদিনের ছুটি) তখন একটু খানি যোগাযোগ হতো। তবে সেটা সীমিত। কারন, রুমানাদের বাসার ফোনটা ওর মায়ের কাছে থাকতো এবং তাই সাহস করে আমি খুব একটা ফোন দিতাম না।

রুমানার মা আমাকে চিনতো। তিনি মাঝে-মধ্যেই বোটের হাটে আসতেন বাজার করতে। স্কুলের পাশেই রাস্তার সাথে যে বাজার তাকে বোটের হাট বলা হয়। সেখানে আসতেন নিয়মিত। আমার সাথে দেখাও হতো। আমি কথা বলতাম না (সাহস পেতাম না)। আর কোন প্রয়োজন ছাড়া আমি কেনই বা কথা বলবো। তবে খেয়াল করেছি, উনি আমাকে আড় চোখে মাঝে-মধ্যে দেখতেন। হয়তো তিনি আমাকে খুব একটা পছন্দ করতেন না। রুমানার সাথে আমার কোন ঝগড়া হয়নি। সম্পর্ক থাকাকালীন এই পুরো সময়টাতে কোন ঝগড়া হয়নি।

আমি আর রুমানা যখন ক্লাস নাইনে উঠি তখন ওর ছোটবোন ক্লাস সিক্সে এসে ভর্তি হয় (সম্ভবত)। আমার সঠিক খেয়াল নেই। তবে আমরা হাই স্কুলে থাকাকালীন রুমানার ছোট বোন এসে ভর্তি হয় এটা ঠিক। তখন মাঝে-মধ্যে ওর সাথেও কথা হতো। ও দেখতে রুমানার মতোই। খুবই ভালো মেয়ে। ভদ্র মেয়ে। আমাকে পছন্দ করতো এবং সবসময় সম্মান দিয়ে কথা বলতো। ওর সাথে আমার যোগাযোগ এখনও আছে। তবে সেটা খুব কম।

তো এভাবে আমরা ক্লাস টেনে উঠলাম। তখন তো পড়াশোনার বেশ চাপ। আমরা বেশ কয়েকজন সাইন্স গ্রুপ নিয়েছিলাম। তবে রুমানা আর্টস-ই নিয়েছিলো। পড়াশোনার সাথে সাথে আমাদের ভালোবাসার সম্পর্কটাও চলছিল সমান তালে। অনেক বন্ধু-বান্ধবী আমাদের হেল্প করেছে। কয়েকজনের নাম না বললেই নয়। শারমিন, লিটন, দিপক, মিলন, তুলি, সফিকুলসহ আরও অনেক। সবাই অনেক অনেক সাপোর্ট দিয়েছে এবং আমাদের সম্পর্কটাকে তারা সবাই খুবই সম্মান করতো।

আমিও ভাবতাম, পড়াশোনা শেষ করে তাহলে রুমানাকেই বিয়ে করবো। অনেক স্বপ্ন দেখতাম। আমার জানামতে, রুমানাও সেটা দেখতো। স্বপ্ন দেখতে দেখতে এসএসসি পরীক্ষা এসে যায় এবং আমরা সবাই ভালোমত প্রিপারেশন নেই পরীক্ষা দেয়ার জন্য। তখন রুমানা আর আমার মধ্যে যোগাযোগ কিছুটা কমে যায়। কারন একটাই – পরীক্ষা। আর মোবাইলে কথা বলার তেমন সুযোগ হয়নি সেটা আগেই বলেছি। রুমানাদের বাসার মোবাইলটা তার মায়ের কাছে থাকতো। তাই আমি নিজে থেকে খুব বেশি কল করিনি।

পরীক্ষা শেষ হলো। তখন তো রেজাল্টের জন্য বসে থাকা। মোবাইল হাতে নিয়ে অনেক অপেক্ষায় থেকেছি। কিন্তু রুমানা সম্ভবত ৩ বা ৪ মাসে আমাকে ২ বা ৩ বার কল করেছিল। তারপরেও কথা হয়েছে মাত্র কয়েক মিনিট। সেটা আসলে কথা না বলার মতোই। এভাবেই সময় গড়িয়ে গেল এবং আমাদের এসএসসি রেজাল্ট প্রকাশিত হলো। আমি পেলাম সাইন্স বিভাগ থেকে ৪.৫৬। আর রুমানা কাছাকাছি পেয়েছিল আর্টস থেকে। ওই বছর (২০১১) আমার রেজাল্ট-টাই স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার সর্বোচ্চ রেজাল্ট ছিল।

এরপর আর কী করার! ভর্তি হলাম দেবীগঞ্জ কলেজে। সেখানেও সাইন্স বিভাগ নিলাম। রুমানার সাথে যোগাযোগ একটু কমে গেল। কারন, কলেজে তো আর স্কুলের মতো জানালার পাশে কথা বলা যায় না। আবার, প্রতিদিন কলেজেও যেতো না। গেলেও দেখা হতো না। দেখা হলেও ওর নতুন বন্ধু-বান্ধবী থাকতো সাথে। কিন্তু অপলক দৃষ্টিতে বেশিরভাগ সময়ই তাকিয়ে থাকতাম। আমি ওই সময় বেশ কিছুদিন কলেজের গণিত শিক্ষক এর বাসায় মেসে থাকতাম। তখন যোগাযোগ আরও কমে গেল।

চিঠি দেয়া বন্ধ হয়ে গেছে। দেখা করা খুব কমে গেছে। মোবাইলে কথা হয় না। সবমিলে সম্পর্কটা কেমন যেন হয়ে গেছে। আমার দিক থেকে কোন কিছুরই কমতি ছিল না। কিন্তু ওর দিক থেকে কেন জানি কমে যাচ্ছিল। আমাকে কিছু বলছিলোও না। তো এরপর….!

কলেজে ভর্তি হয়েছি প্রায় ৬ মাস হয়ে গেছে। সম্পর্ক তো এভাবেই চলছিল। তখন হঠাৎ মাহমুদা আফরিন মনি (আমার পাশের গ্রামের মেয়ে, আমার কমপিটিটর বান্ধবী) আমাকে ডাকলো। তখন ক্লাস চলছিল। আমি ক্লাসে ঢুকবো এমন সময়। পরে ক্লাসে না ঢুকে বাইরে বেরিয়ে এলাম।

আপনারা যারা দেবীগঞ্জ সরকারি কলেজ চিনেন তারা জেনে থাকবেন, কলেজের গেটের সামনে একটি বড় আম গাছ (সম্ভবত) আছে। সেই গাছটার নিচে দেখি মাহমুদা ও রুমানা দাড়িয়ে আছে। তখন গরমকাল ছিল। রুমানার মাথায় ছাতাও ছিল। আমি কাছে গেলাম। আমার মনে একটু ভয় হচ্ছিল। না জানি কি বলবে!

যা ভাবছি তাই। রুমানা আমাকে বললো যে, এই সম্পর্কটা তার পক্ষে আর কন্টিনিউ করা সম্ভব না। আমি জানতে চাইলাম – কেন? সে বললো তার বাসা থেকে মেনে নেবে না। আর তাছাড়া পালিয়ে বিয়ে করাও তার পক্ষে সম্ভব না। আমি যেন হতভম্ব হয়ে গেলাম। সে বেশ কান্নাও করেছে সেদিন। আমি শোনার পরে তেমন কিছু বলিনি। শুধু বলেছি, ঠিক আছে।

আমি একটু ভেঙেই পড়েছিলাম। কারন, এটা আমি কখনোই আশা করিনি। আর তাছাড়া ওকে আমি খুব ভালোবাসতাম। তার মায়ায় পড়েছিলাম। তার মুখটা আমার কাছে সবসময় আনন্দের মতো হতো। ও দেখতে বেশ মায়াবী ছিল। ছবি থাকলে শেয়ার করতাম। কিন্তু ভাগ্যিস, কোন ছবিই আমার কাছে নেই।

আমিও এই ঘটনার পরে বেশ কিছুদিন মানসিকভাবে বিকারগ্রস্থ ছিলাম। তারপর আবার পড়াশোনা কন্টিনিউ করেছি। যে চলে যাবার সে তা চলেই গেছে। তার কথা ভেবে আর কি হবে। জীবন এভাবেই চলছিল। তখন আর রুমানাকে নিয়ে তেমন ভাবতাম না। ভেবেই কি হবে। সে তো রেজেক্ট করে দিয়েছে আমাকে।

এরপর আমি দেখা পাই আমার স্বপ্নের রানী সুমি’র। যার আর আমার গল্পটা বাস্তবতাকেও হার মানাবে। ভালোবাসা ও বিষাদের এক মিশ্র গল্প রয়েছে এখানে। অবশ্যই শুরু থেকে শেষ অবধি আমি শেয়ার করবো। ধৈর্য ধরে পড়বেন সবাই। তবে রুমানার গল্পটা শেষ হয়নি। সেটা আগে শেষ করি। পরে আবার ইন্টারে আবার ফিরে আসবো এবং বর্তমান জীবন সঙ্গীনী সুমি’র ব্যাপারে সব কথা বলবো।

তো ইন্টার পাশ করলাম। ইন্টারে আমার রেজাল্ট খুব একটা ভালো হয়নি। কেবল ৩.৬০ পেয়েছি সাইন্স গ্রুপ থেকে। ওই বছর রসায়ন পরীক্ষা (২০১৩) খুব কঠিন হয়েছিল। অনেকেই ফেইল করেছে রসায়নে। ম্যাট্রিকে এ প্লাস প্রাপ্ত কয়েকজন ইন্টারে ফেইল করেছে। ভাগ্যিস, আমি পাশ করেছিলাম।

রুমানা রেজেক্ট করার কিছুদিন পরে আমার বন্ধু মিলন (যার সাথে এখনও ভালো যোগাযোগ আছে আমার) আমাকে হঠাৎ ফোন করে একদিন এক আজব কথা শুনালো। সেটা হলো আমাকে রুমানা কেন রেজেক্ট করেছে সেটার কারন। রুমানা বলেছে, ছোটবেলায় আমার মা নাকি তাদের বাসায় কাজ করেছে। আসলে মূল ঘটনাটা ছিল এরকম। রুমানার বাপের আরও দুই ভাই ছিল। ওই দুই ভাইয়ের বাসায় ছোটবেলায় আমার নানা যাওয়া আসা করতো। খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। তখন হঠাৎ মা-ও নানার সাথে যেত। প্রয়োজনে টুকিটাকি কাজ করে দিতো।

একদম যে বাড়ির কাজের বুয়া ছিল বিষয়টি এরকম নয়। কিন্তু রুমানা বিষয়টিকে এভাবে প্রকাশ করেছে। আমার মা ওদের বাসায় কাজ করেছে তাই আমাকে তার মা কিংবা পরিবার মেনে নেবে না। কথাটা শুনে আমার পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গিয়েছিল। অন্য কাউকে নিয়ে কথা নয় – আমার মাকে নিয়ে বলে কথা। আমি ওই মুহূর্তে ওই বন্ধুর কাছে তেমন কোন মন্তব্য করিনি। কারন, মন্তব্য করার মতো পরিস্থিতি তখন ছিলো না। মিলন যখন আমাকে এই বিষয়টি বলেছে তার কয়েক মাস আগেই রুমানা আমাকে রেজেক্ট করেছে।

তো এভাবেই চলছিল। বেশ কয়েক মাস পর অর্থাৎ তখন আমি ওই কলেজেই ডিগ্রিতে পড়াশোনা করি তখন শুনি আরেক ভয়ংকর কথা। কেন ডিগ্রিতে পড়লাম সেই বিষয় নিয়ে আলাদা একটা পোস্ট লিখবো পরে। যা শুনি তা হলো – রুমানা শরীফ বাজারের একটি ছেলের সাথে প্রেম করতো। আমাকে ছাড়ার পরে। তার শারিরীক সম্পর্কে জড়িয়েছে এবং পেটে সন্তানও এসেছে। এই বিষয়টি আবার এলাকায় জানাজানিও হয়ে গেছে। কি একটা অবস্থা! পরে শুনি, রুমানা আর এলাকাতে নাই। দূরে কোথাও চলে গেছে অ্যাবরশন করার জন্য। কারন, এই ছেলে সাফ না করে দিয়েছে যে, ওকে বিয়ে করবে না। ছেলেটাকে আমি আগে থেকেই চিনতাম। খুব একটা ভালো চরিত্রের ছিলো না।

পরে খুব আফসোস করলাম। যাকে আমি এতো ভালোবাসতাম (কোনদিন) তার সাথে এমন ঘটনা। খারাপ লাগারই কথা। পরে আবার মনে হলো আমার মা নিয়ে যা বলেছিলো সেই কথা। তখন আবার মনটা বলে উঠলো যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে যা হয়েছে তা কোনদিন কারও জন্যই ভালো ছিল না।

পরে ভাবলাম, আল্লাহই ভালো জানে। যার সাথে প্রায় ৭ বছরের সম্পর্কে আমি হাতটাও ধরিনি, সেখানে ৬ মাসের সম্পর্কে প্রেগন্যান্ট – ভাবা যায়! তারপরেও সেই সম্পর্ক অস্বীকার। আসলে রুমানা ওই সময় খুব ভেঙে পড়েছিলো। সে যে আত্মহত্যা করেনি এটিই বড় বিষয়। যেভাবেই হোক, খারাপ সময়টা সে পার করেছে। অ্যাবরশন করে আসার বেশ কয়েক মাস পরে ওর সাথে আমার রাস্তায় দেখা। আমাদের এলাকাতেই। তখন ওকে প্রশ্ন করেছিলাম – কিভাবে কি হলো এসব? সে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি আমাকে। কারন, সদুত্তর দেয়ার মতো কোনকিছু ছিল না তার কাছে। তার চেহারা দেখে সেদিন আমার কাছে মনে হয়েছে – সে আমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। অবশ্য আমি তাকে আগেই ক্ষমা করে দিয়েছি।

তারপর অনেক দিন কেটে গেছে। রুমানার বিয়ে হয়েছে। এক ছেলে সবকিছু জেনেই তাকে বিয়ে করেছে। তার একটা মেয়ে হয়েছে। তার ছোটবোন সুমনা’র সুবাদে ২০২৩ অথবা ২০২৪ সালের কোন একসময় রুমানার সাথে একদিন কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। ভিডিও কলে কথা বলেছি। সে ভালোই আছে। তার সব কষ্টের দিনগুলো কেটে গেছে। আমার সাথে যাই করুক না কেন, সে এখন ভালো আছে এটাই বড় কথা। জীবনে যে পরিস্থিতিই আসুক না কেন, ধৈর্য ধরতে হয়। তবে হ্যা, আপনি পাপ করলে তার শাস্তি কিছুটা হলেও আপনাকে পেতে হবে। এই বাস্তব গল্প যদি আপনি পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই বুঝতে পারছেন।

এখন আর তেমন যোগাযোগ হয় না। কারন, তার হাজব্যান্ড আছে। আমার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করার খুব একটা ইচ্ছেও নেই। তবুও মনে পড়ে। স্মৃতি হয়ে আছে জীবনে। তবে রুমানা খুব সহজ-সরল প্রকৃতির ছিলো। খুব মায়াবী চেহারা ছিলো তার। আমার কাছে অনন্য ছিলো। সেই ভালো থাকুক – সেই প্রত্যাশাই করি। এই লিখা সে নিজে যদি কোনদিন পড়ে অবশ্যই আমাকে কল দেবে এটা আমি বিশ্বাস করি। কারন, এখানে প্রকাশ করা একটা শব্দও মিথ্যা নয়। এখন শোনাবো আমার প্রিয়তমা বর্তমান স্ত্রীর (যাকে সঠিক বয়সে ভালোবেসেছিলাম এবং অনেক কষ্টের পরে পেয়েছি) কথা। এখানেও এক আকাশ পরিমাণ কষ্টের কথা আছে।

ওই পর্বের সমাপ্তি ধরে নেন। এখন সুমির কথা বলবো। যে বর্তমানে আমার স্ত্রী। আমি যখন ইন্টারমিডিয়েটে পড়ি দেবীগঞ্জ সরকারি কলেজে তখন (আগেই বলেছি সেখানে মেসে থাকতাম) আমার বন্ধুর ভাইয়ের বিয়ের আয়োজন হয়। আমার বন্ধুর নাম মোহর এবং তাদের বাড়ি সুমিদের বাড়ির প্রায় সাথেই। সুমিদের বাড়িটা নতুন। ওরা আগে ছিল কালীগঞ্জ বাজারের কাছেই নাম প্রেম বাজার সেখানে। তারপর সেখান থেকে এসে মোহরদের (আমার বন্ধু) বাড়ির পাশেই বাড়ি করে। তারা যে বাড়ি করেছে সেটা আমি জানতাম না।

তো প্রস্তুতি নিয়ে বিয়ে খেতে আসলাম। একটা মাইক্রোবাস নিয়ে এসেছে এবং অন্যান্য আরও কিছু গাড়ি আছে। আমি হঠাৎ করেই সুমিকে দেখতে পাই। সুমির বয়স তখন ৯ কি ১০ বছর। খুব সাধারন একটা মেয়ে কিন্তু দেখতে মাশাআল্লাহ অসাধারন। ছো্ট্ট মেয়ে। আমার ওকে খুবই ভালো লাগলো। মোহরকে বললাম, এটা কে? কোথায় বাড়ি? সে আমায় সবকিছু বললো। আমি আমার বন্ধুটাকে ওই রাতেই বলেছি যে, আমি ওকে পছন্দ করে ফেলেছি। ও বড় হলে ওকেই আমি বিয়ে করবো। আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।

হয়তো মোহর বিষয়টাকে সেভাবে নেয়নি। তো এক গাড়িতেই গেলাম। সুমি গাড়ির সামনের সিটে আর আমি পিছনের সিটে। রাস্তায় দেবীগঞ্জ পার হয়ে কিছুদূর পর মেলা হচ্ছে – সেখানে গাড়ি থেমেছিল কিছু সময়ের জন্য। পরে আমি গাড়ি থেকে নেমে কিছু চকলেট কিনে সুমির হাতে দেই। পরে ও এবং ওরসাথে যারা ছিল (ওর খালা’রা ছিল) সবাই মিলে খেয়েছে। বিয়ে বাড়িতে পৌছলাম। বিয়ে বাড়ির আয়োজন খুব সাদামাটা ছিল।

বিয়ে হতে হতে প্রায় রাত ৫টা বেঁজে গেল। এই পুরো সময়জুড়ে আমি যখনই সময় পেয়েছি সুমিকে দেখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কথা বলার সুযোগ হয়নি। পরে বিয়ে শেষ হলো এবং আমরা চলে আসলাম। প্রায় সকাল হয়ে গেছে। আমি গাড়ি থেকে নেমে বাসায় চলে এসেছিলাম। তারপর যখন সময় পেতাম মাঝে-মধ্যেই আমার বন্ধুর বাসায় যেতাম এবং ধীরে ধীরে পাশেই সুমিদের বাসায় যাওয়া শুরু করি। ওদের পরিবারের সবার সাথে পরিচিত হই।

ওরা তিন বোন এক ভাই। আমি যখন প্রথম যাওয়া শুরু করি তখন ভাই’টার জন্ম হয়নি। বেশ কয়েক বছর পর ওর জন্ম হয়। ওর বাবা খুব সাধারন মানুষ। তারা খুবই গরীব ও অসহায় ছিল। দিন আনে দিন খায় – এমন অবস্থা। সুমির বাবা (বর্তমান আমার শশুর) বাশের কুলা, চালুন, মাচা ইত্যাদি কাজ করতো। খুব একটা অসচ্ছলতা ছিল না, সংসার চলতো আরকি। কাজগুলোতে সুমি খুবই হেল্প করতো। সুমির ছোটবোন ফেরদৌসী সেও খুব হেল্প করতো। আমি গিয়ে বসে থাকতাম, দেখতাম, গল্প করতাম আর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতাম।

একটা সময় আমি মেস থেকে বের হয়ে আসি। বাসায়-ই থাকা শুরু করি। তখন কি একটা বিষয় নিয়ে আমাদের পরিবারের সাথে কার সাথে জানি ঝামেলা হয় (আমার ঠিক মনে নেই)। ও মনে পড়ছে। রাজশাহীর কিছু লোকের সাথে ঝামেলা হয়। তারা সম্ভবত মামলা করেছিল। আমি প্রায় ১৫ থেকে ২০ দিন বাইরে থাকি অর্থাৎ আমার বন্ধুর বাসায়। সেই সুবাদে দিনের বেলার সময়টা সুমিদের বাসায়-ই কাটাতাম। পাড়ার কেউ তেমন কিছু বলতো না। কারন, সবাই আমাকে ভদ্র, জ্ঞানী এবং ভালো ছাত্র ও ভালো মানুষ হিসেবে জানতো।

তখন আমি সুমিকে প্রাইভেট পড়ানো শুরু করলাম। বিকেল হলেই সাইকেল নিয়ে চলে যেতাম ওদের বাসায়। তারপর পড়ানো শেষ করে সন্ধ্যা কিংবা আরেকটু পরে ফিরে আসতাম। আমার বাসায় অবশ্য এসব নিয়ে কথা হতো। আমি তেমন কানে নিতাম না এবং আমার মতো করে সুমিকে ভালোবেসে যেতাম। ভালোবাসাগুলো আসলে এরকমই হয়। কোন বাঁধাই বাঁধা মনে হয় না।

আমি সুমির মা-বাবার সাথে খুব খোলামেলা কথা বলতাম। সুমিকে আমি বিয়ে করবো সেই কথাও খুব সহজভাবে উনাদের বলেছিলাম। মনের মধ্যে এক আকাশ পরিমাণ স্বপ্ন তৈরী হয়ে গিয়েছিল। আমি সুমিকে প্রথম যেদিন আমার মনের কথা বলি সেও তা গ্রহণ করে নেয়। সেও আমাকে ভালোবাসতে শুরু করে। গ্রামের ও আশপাশের অনেক ছেলেই তাকে পছন্দ করতো। দেখতে মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর এবং তাই এই অবস্থা। কিন্তু কেউ টাইম পেতো না, টাইম পেতাম কেবল আমি।

Sumi & Afrin
আমার নাদুস-নুদুস চেহারার বউ সুমি আর ব্রিটিশ আফরিন

ছবিটা শেয়ার করলাম। কারন, আপনাদের দেখার ইচ্ছে থাকতেই পারে। আপনাদের কারও কারও কাছে সুন্দর নাও মনে হতে পারে। কিন্তু আমার কাছে সে অনেক সুন্দর। যাই হোক, এই ওদের বাড়িতে যাওয়া আসা, নিজের পড়াশোনা এভাবেই ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ফেলি। ইন্টারে আমার রেজাল্ট খুব ভালো হয়নি। মাত্র ৩.৬০ পেয়েছি। তবে, আরও ভালো করতে পারতাম আমি। কিন্তু সবমিলে একটু বেশি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিলাম। অন্যদিকে, মাথার একটা অংশ শুধু নয় – বুকের বাম পাশটাও তো সুমি নিয়ে নিয়েছিল।

তো আমি ইন্টার পাশ করার পরে আমার ইচ্ছে ছিল কোচিং করবো। তারপর ইউনিভার্সিটি পরীক্ষা দেব। কোথাও না কোথাও চান্স হবে এই আশা ছিল। কিন্তু ঘটনার মোড় অন্যদিকে ঘুরে গেল। আমার এক নিকট আত্মীয় বললো যে, আমি যেন বেসিক কম্পিউটার শিখে ঢাকায় আসি এবং গার্মেন্টস এ তারা একটি চাকরি নিয়ে দেবে এবং পাশাপাশি পড়াশোনা করবো। আমাদের সংসারও অভাবের মধ্যে যাচ্ছিল। পরে ভাবলাম, ভালো সিদ্ধান্ত। টাকা আয়ও হবে, পড়াশোনাও হবে। তারপর কম্পিউটার শেখা শুরু করলাম দেবীগঞ্জে রেজানুর উল্লাহ ভাইয়ের কাছে। ভাই খুবই ভালো মানুষ। আমি সন্ধ্যায় যেতাম এবং সারারাত থাকতাম তারপর সকালে চলে আসতাম। আমার যতোটুকু ইচ্ছা ততটুকু প্র্যাকটিস করতাম।

টাইপিং শিখতে আমার খুব বেশি সময় লাগেনি। মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ড বেশ কিছুদিনের মধ্যেই শিখে ফেললাম। তারপর ঢাকায় আসার প্রস্তৃুতি শুরু হলো। তখন ঢাকায় আসলাম। সাথে আমার মা আর ছোটবোন আসলো। ছোটবোন গার্মেন্টস এ চাকরি করবে। মা রান্না-বান্না করবে। আমি ঢাকায় এসে দেখলাম ভিন্ন চিত্র। আমাকে যা বলা হয়েছিল তা একেবারেই ভুল। আমি কোথাও কোন কম্পিউটারের চাকরি পাইনি। মানে অপারেটর হিসেবে। সুমি তখন বাসায়-ই ছিল। তার সাথে আমার প্রতিনিয়ত যোগাযোগ ছিল।

পরে ১ মাস পর এক পরিচিত আত্মীয়ের মাধ্যমে ট্যালিসম্যান লিমিটেডে আমি চাকরি নেই। সেই চাকরিটা আমি ৪ মাসের মতো করেছি। কিন্তু ভালো লাগেনি (যদিও ফিউচার ছিল) বিধায় চাকরিটা ছেড়ে দেই। তারপর আরেকটি জায়গায় ১০ হাজার টাকার মতো ধরা খাই। টাওয়ারে চাকরির কথা বলে টাকাগুলো নিয়েছিল। তখন তো আর বুঝতাম না। অনার্সে ভর্তি হতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেটাও কিছু কারনে সম্ভব হয়নি। পরে ঢাকা থেকে বাসায় ফিরে ওই দেবীগঞ্জ সরকারি কলেজেই ডিগ্রিত ভর্তি হই (বিএসএস গ্রুপে)।

তখন আমার জীবনে ঘটে যায় এক দুঃখের ঘটনা। আমার সুমির হঠাৎ করেই বিয়ে হয়ে যায়। আমি বিয়ের দিন জানতে পেরেছি কিন্তু বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারনে আমি বিয়ে ভাঙতে পারিনি। সুমি তখন সবেমাত্র ক্লাস সিক্সে পড়ে। সেও ওইভাবে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। গাজাখোর একটা ছেলের সাথে ওর বিয়ে হয়ে যায়। আমার বন্ধু মোহর আমাকে জানিয়েছিল। ঘরের কোনায় বসে বসে কেবল কেঁদেছি আর কিছুই করতে পারিনি। বিয়েটা খুব গোপনে হয়েছে যার জন্য বিয়ের আগের দিন পর্যন্ত কিছুই টের পাইনি। আমাকে ওর পরিবারের পক্ষ থেকে কিছুই বলা হয়নি। আমার পরিবারের পক্ষ থেকেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এখানে আরও ছোটখাট অনেক বিষয় আছে। লিখতে গেলে অনেক লিখতে হবে। তাই সেগুলা স্কিপ করে যাচ্ছি।

ওই ছেলের পরিবার ঢাকার গাজীপুরে থাকতো। হঠাৎ তারা গাজীপুর থেকে জমি জায়গা বিক্রি করে কালীগঞ্জে গিয়ে বাসা করে। কিভাবে যেন সুমিকে তারা দেখতে পায়। তারা খুবই পছন্দ করে। ওই ছেলেও বিয়ের জন্য আগ্রহ দেখায়। আমার চেয়ে দেখতে সুন্দর ছেলেটা। আমি তো কালো বা শ্যামলা ধরতে পারেন। ওই ছেলে ফর্সা ও সুন্দর। তবে বয়সে আমার চেয়ে ছোট। ছেলে যে নেশা করতো এটা কেউ জানতো না। হয়তো ছেলের পরিবার জানতো কিন্তু সুমির বিয়ের যারা আয়োজন করছে তারা কেউ জানতো না।

এক রাতের মধ্যে বিয়ে হয়ে গেল। দুমড়ে মুচড়ে আমার হৃদয়টা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল। কি পরিমাণ কষ্ট পেয়েছি সেটা লিখে আপনাদের বোঝাতে পারবো না। আমার মনের কষ্টটা আমি ঠিক মতো প্রকাশও করতে পারিনি। কাউকে বলতে পারিনি। সুমির মা বাবাও একবারের জন্য আমার কথা ভাবেনি। কেউ ভাবেনি। ওদের বংশের সবাই জানতো – আমি সুমিকে ভালোবাসি। কেউ কোন খোঁজ করার চেষ্টা করেনি। আমিও নিরুপায় হয়ে সব মেনে নিয়েছিলাম। আমার আর করার কিছুই ছিলো না। আমি বিভিন্ন দিক থেকে অসহায় ছিলাম।

পরে বিয়ে হয়ে গেল। সুমি ওই পরিবারে গিয়ে সংসার শুরু করলো। আমি সব মেনে নিলাম কেবল সুমিকে মন থেকে মুছে ফেলতে পারলাম না। এটা কখনোই সম্ভব নয়। যাকে আপনি ভালোবাসবেন তাকে কখনোই মন থেকে মুছতে পারবেন না। সে যতো ভালোই হোক আর যতো খারাপই হোক।

কিন্তু বিয়ের পরেও সুমি আমার সাথে যোগাযোগ শুরু করলো। হঠাৎ এভাবে বিয়ের জন্য সে আমার কাছে মাফ চাইলো। সব মেনে নিতে বললো। বিয়ের দুই দিনের মাথায় সুমির গায়ে আঘাত করেছিল ওই বদমাইশটা। সুমি নিজেও হয়তো বুঝতে পেরেছিল যে, ছেলেটা নেশাখোর। কিন্তু সে তো ছোট মানুষ। সে আর কি সিদ্ধান্ত নিবে! আর বিয়ে তো হয়ে গেছে। এখন যেভাবেই হোক সংসার করতে হবে। আমাকে সুমি কথার ছলে বলেছিলো যে, তুমি ইচ্ছে করলে আমাকে নিয়ে চলে যেতে পারো – আমি বাঁধা দেব না। কিন্তু আমিই তাকে না করেছি। কারন, সংসার ভাঙা আমার পক্ষ থেকে কোনভাবেই সম্ভব নয়। যা হবার তা হয়ে গেছে।

কিন্তু সুমি প্রায়ই যোগাযোগ করতো। আমার ভালো-মন্দের খোঁজ-খবর নিতো। তখন পর্যন্ত আমি বিয়ে করিনি। বিয়ে করার ইচ্ছেও ছিলো না। কিন্তু আমার পরিবার তখনও বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত ছিল। আমার ভাই কারও মাধ্যমে আমার জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিলো। আমি শুরুতে তা প্রত্যাখ্যান করলেও পরে কিছু বিশেষ কারনে বিয়ে করার জন্য ইচ্ছে পোষণ করি। আমার জন্য তখন পাত্রী দেখা শুরু হয়। আমি পুরোপুরি ভেঙে বললাম না যে, কেন বিয়েতে রাজী হলাম। আপনারা বুদ্ধি থাকলে বুঝে নিয়েন।

পরে এক থেকে দুই মাসের মধ্যে আমার জন্য পাত্রী নির্বাচন করা হলো। আমি তাকে দেখিনি। ওর নাম হলো সাবিনা আক্তার জেসমিন। প্রায় আমার সমবয়সী মানে এক অথবা দেড় বছরের ছোট। বিয়ে ঠিক হলো এবং বিয়ে হয়েও গেল। সুমি যখন জানলো, আমি বিয়ে করে ফেলেছি তখন যোগাযোগটা কিছুদিনের জন্য সামান্য কমে গিয়েছিল। কমে যাওয়াটা স্বাভাবিক বিষয়।

পরে আমিও সংসার শুরু করলাম। সংসার জীবনে পা দিলাম। একটি দোকান ছিল, সেটা দিয়ে কোনরকম দিন চলতে লাগলো। ওদিকে দেড় বছরের মধ্যে সুমির একটি ছেলে সন্তান হলো। আমারও একটি ছেলে সন্তান হলো এবং সে মারা গেল একদিনের মধ্যে। সম্ভবত নিউমোনিয়া হয়েছিল। এভাবে ভালো-মন্দে দিন চলতে লাগলো।

তবে বিয়ের ৬ মাস পর থেকেই আমার স্ত্রী সাবিনা আক্তার জেসমিনের কিছু অসুস্থ্যতা ধরা পড়ে। তার প্রচণ্ড মাথা ব্যথা হয়। আমার পরিবারের মানুষগুলোর সাথে সে খুব একটা কথা বলে না। দিনের বেশিরভাগ সময়ই মাথা ব্যথা নিয়ে পড়ে থাকে। ধীরে ধীরে আমার প্রতি তার বিরক্তিভাব বেড়ে যায়। আমি তার কাছে অসহ্য হয়ে উঠি। যখন সে তার বাবার বাড়িতে যায় তখন বেশ সুস্থ্য থাকে। কিন্তু যখনই আমাদের বাসায় আসে তখনই নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারে না।

আমি ধীরে ধীরে তার চিকিৎসা শুরু করলাম। প্রথমে অ্যালোপ্যাথি ওষুধ খাওয়ালাম কিন্তু কাজ হচ্ছিল না। পরে বিভিন্ন কবিরাজের কাছে নিয়ে যাওয়া শুরু করলাম। অনেক কবিরাজকে আমাদের বাসায়ও আনলাম। আমি কিন্তু তখনও ডিগ্রিতে পড়ছিলাম। সম্ভবত থার্ড ইয়ারে।

চলবে…

শেয়ার করুন :)

Leave a Reply

Scroll to Top