রাজনীতি নিয়ে আপনার মন্তব্য কী— যদি এমন প্রশ্ন করা হয়, তাহলে বেশিরভাগ মানুষ নেতিবাচক উত্তর দিতে দ্বিধাবোধ করবে না। কারণ, আগেকার রাজনীতি আর বর্তমান রাজনীতির আকাশ-পাতাল ব্যবধান। রাজনীতি হবে দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য, দেশের কল্যাণের জন্য। কিন্তু এখন বেশিরভাগ মানুষ রাজনীতি করে নিজের পকেট ভারী করার জন্য। নিজেকে জাহির করার জন্য। সমাজে তাকে দেখে লোক ভয় পাবে, কিছু বলার সাহস পাবে না— এমন হওয়ার জন্য। সত্যিকার অর্থেই বেশিরভাগ মানুষ এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই রাজনীতিতে নিজের নাম লেখায়।
বাংলাদেশে মানুষ অনেক বেশি। তাই রাজনীতিবিদও বেশি। সংসদীয় ব্যবস্থায় ৩০০-এর অধিক এমপি প্রয়োজন হয়— এটা ঠিক আছে। কিন্তু পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে একটি দলের সাথে কত মানুষ যে যুক্ত, তা বলা মুশকিল। একটু সুবিধা পেলেই মানুষ এক দল থেকে আরেক দলে চলে যাচ্ছে। যে দলে ইনকাম বেশি, সেই দলে মানুষও বেশি।
নবিজির (সা.) আমলে হযরত উমর (রা.) নিজে পিঠে করে আটার বস্তা মানুষের বাসায় দিয়ে আসতেন। রাতের অন্ধকারে ছদ্মবেশে খোঁজ-খবর রাখতেন। কিন্তু বাস্তবে এখন দেশের সরকারের পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশে একেবারেই সম্ভব নয়। কারণ, এখানে মানুষ অনেক। আলাদা আলাদা করে পরিবার দেখার সুযোগ আমাদের দেশের সরকারের নেই। কিন্তু প্রতিটি স্তরেই জনবল নিয়োগ দেওয়া আছে। তারা যদি ঠিকমতো তাদের কাজ করত, তাহলে উমর (রা.)-এর সময়ের মতোই সমাজব্যবস্থা ভালো থাকত। সমাজে কোনো দুর্নীতি আর অনিয়ম থাকত না।
আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমরা এমন একটি সমাজব্যবস্থায় আছি, যেখানে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, বাটপারি, জুয়া, খুন-খারাবি অহরহ হচ্ছে। নিজের জীবনেরই কোনো নিরাপত্তা নেই— সেখানে সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা তো অনেক দূরের কথা।
ভোটের আগে আগে প্রার্থীরা সাধারণ মানুষের সাথে একটু মেশে। কিন্তু ভোটে পাস করুক বা না করুক— এরপর আর তাদের দেখা পাওয়া যায় না। তারা তখন আকাশের চাঁদ হয়ে যায়। তাদের অসীম ক্ষমতা হয়ে যায়। সরকারি সব টাকার উৎস তাদের ব্যাংক হয়ে যায়। সবাই যে এরকম, আমি সে কথা বলছি না। অনেকেই— অর্থাৎ বেশিরভাগই— এমন করে।
শুধু রাজনীতির কথা বাদই দিলাম, সামান্য সরকারি পোস্টে চাকরি করে কয়েক বছরের মধ্যেই বিদেশে বাড়ি তৈরি করে। এটা কি আদৌ সম্ভব? পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে সম্ভব না হলেও এটা বাংলাদেশে সম্ভব। বাংলাদেশে আরও অনেক কিছু সম্ভব, যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।
রাজনীতি করতে গিয়ে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছে। তবুও কেউ দেখছে না, কোনো খোঁজ রাখছে না। তাহলে একটি দেশের উন্নতি কীভাবে হবে? রাজনীতি হতে হবে স্বচ্ছ, মানুষের জন্য কাজ করবে নেতা। দেশের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেবে। কিন্তু এই কথাগুলো কেবল বইয়েই মানায়, বাস্তবে নয়।
হ্যাঁ, গুটিকয়েক রাজনীতিবিদ হয়তো ভালো মনের মানুষ। তারা চেষ্টা করে সমাজকে কিছু দিতে, সমাজের মানুষের জন্য কিছু করতে, দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে। কিন্তু বেশিরভাগ নেতা মিথ্যাবাদী ও লোভী হওয়ায় এই গুটিকয়েক সৎ রাজনীতিবিদ তাদের ভিড়ে চাপা পড়ে যায়। অর্থাৎ গোয়ালে দুষ্ট গরু বেশি থাকলে যা হয়।
বাংলাদেশে মাঝে মাঝে এমন খবর আমরা শুনতে পাই, যা আসলে বাস্তবে সম্ভব কিনা— তা নিয়ে মনের মধ্যে সন্দেহ হয়। কিন্তু সাংবাদিক সাহেবরা তো আর মিথ্যা লেখেন না। তারা বিস্তারিত জেনেই কলমে হাত দেন। সামান্য সরকারি চাকরি করে, কিন্তু রাজনীতিতে তার অবদান আছে (নাম-ধাম আছে) কিংবা রাজনীতি করা মানুষের সাথে তার সম্পর্ক ভালো— সে রাতারাতি কোটি টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছে। একজন সরকারি কর্মচারী কয়েক বছরের মধ্যেই যদি কোটি টাকার মালিক হয়ে যায়, তাহলে সে দুর্নীতি করেছে কিনা— সেটা উদ্ঘাটন করার দায়িত্ব সরকারের।
ওই ব্যক্তি রাতারাতি এত টাকা, গাড়ি-বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিক কীভাবে হলো— এটা দেখার দায়িত্ব কার? অবশ্যই সরকারের। কিন্তু বাস্তবে কয়জনের বিচার হয়েছে? তেমন কারোরই হয়নি। সবাই টাকার ব্যবহারে বেঁচে গেছে। রাজনীতিবিদরা তাদের চাদরে তাদের ঢেকে নেয়। তখন আর করার কিছু থাকে না।
বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা যদি সৎ হতো, তাহলে এই দেশ আর এখনও এত দুর্বল থাকত না। আমেরিকা-ইউরোপের মতো হয়ে যেত। মানুষের জীবনমান উন্নত থাকত। হ্যাঁ, এখনও জীবনমান উন্নত— যে কয়জন রাজনীতি করে, সেই কয়জনের। দেশ থেকে কত হাজার, লক্ষ, কোটি টাকা পাচার হয়েছে— কত খবর প্রকাশ হলো, অথচ বিচারের কোনো নামই নেই।
সবাই শুধু নিজেকে গোছাতে ব্যস্ত। কেউ স্বার্থপরতা বাদ দিয়ে কাজ করতে পারছে না। কিন্তু এই দেশের উন্নয়নের জন্য, দেশের মানুষের ভালোর জন্য, স্বপ্নের দেশ ইউরোপ-আমেরিকা বানানোর জন্য অবশ্যই প্রত্যেক রাজনীতিবিদকে সৎ হওয়া প্রয়োজন। নিঃস্বার্থভাবে দেশের প্রয়োজনে কাজ করা প্রয়োজন। তাদের ভুঁড়ির যদি চর্বি কমে যেত, তাহলে এই দেশের অনেক মানুষ বেঁচে যেত। কিন্তু আমার এই কথা আদৌ কি কখনো বাস্তবায়িত হবে? (আল্লাহ ভরসা)।
আরও পড়ুন: জুলাই ২০২৪ – এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতার নাম



