প্রাইমারী স্কুলের সেই স্মৃতি আজও ভুলতে পারিনি

প্রাইমারী স্কুলের স্মৃতি

আমি তখন খুবই ছোট। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি। আমাদের বার্ষিক পরীক্ষার সময় (২০০৫) নিজ স্কুলে পরীক্ষা না হয়ে অন্য স্কুলে হতো। আমি বেশ পরিপাটি হয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছি। বলে রাখা ভালো, ছোটবেলা থেকেই আমার হাতের লিখা খুব চালু। অর্থাৎ আমি খুব দ্রুত লিখতে পারি। বিভিন্ন স্টাইলে লিখতে পারি। কারও লিখা দেখামাত্রই অল্প সময়ের মধ্যে ডিজাইন কপি করতে পারতাম।

তো যা বলছিলাম, পরীক্ষার বেঞ্চে বসলাম, যথারীতি পরীক্ষা দেয়া শুরু করলাম। এখন দেখি, সবার আগে আমার লিখা শেষ। কি আর করার! কতক্ষণ আর বসে থাকবো। পরে বের হয়ে পড়লাম। দরজার ওখানেই যে ম্যাডাম ডিউরিত ছিলেন তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন, তোমার পরীক্ষা শেষ? আমি যথারীতি হ্যা সম্বোধন করে উত্তর দিলাম। তিনি অবাক হয়ে গেলেন এবং আমার গালে একটা চুমো দিলেন।

এটা আদরের একটা অনন্য দৃষ্টান্ত ছিলো। ওই ম্যাডাম আমাকে আগে থেকেই খানিকটা চিনতো। আমরা পরীক্ষা দিতে এসেছিলাম প্রায় ১৫০ জনের মতো। অন্যান্য স্কুল মিলে আরকি। সেখানে সবার আগে আমার লিখা শেষ – বাহবা তো পাওয়ারই কথা। কিন্তু ম্যাডাম বাহবাও দিলেন আবার চুমোও দিয়ে দিলেন। সেই চুমো আমি আজও ভুলিনি এবং কোনদিন ভুলতেও পারবো না বলে মনে হয়।

সেই স্কুলের এক্জাক্ট লোকেশন আমি আপনাদের দিচ্ছি। পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার দেবীডুবা ইউনিয়নের খুটামারা বোটের হাট বাজার থেকে খানিকটা পূর্ব দিকে শরীফ বাজার অবস্থিত। সেই শরীফ বাজার থেকে আরও খানিকটা পূর্বদিকে একটি প্রাইমারী স্কুল অবস্থিত। পেড়ালবাড়ী কত জানি (সংখ্যা) আমার ঠিক মনে নেই। করতোয়া নদী ঘেঁষে সেই স্কুলের অবস্থান। আর আমি সম্ভবত ৫ম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা অথবা বৃত্তি পরীক্ষা দিতে এসেছিলাম। আমার খুব সঠিক করে খেয়াল নেই।

জানি না, সেই ম্যাডাম এখন বেঁচে আছেন কিনা কিংবা বেঁচে থাকলেও কোথায় আছেন জানি না। তবে এই স্মৃতি ভুলে যাওয়ার মতো নয়। আমি পড়তাম ৫৯ নং দেবীডুবা/২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে তখন হরিপদ স্যার, হেড মাস্টার শাহ জামাল স্যার, বিথী ম্যাডাম – এনারা ছিলেন। সবাই দূর্দান্ত ট্যালেন্ট ছিলেন। আমরা যখন লাইনে দাড়াতাম তখন হেড মাস্টার সাহেব নিজে আমার সোনার বাংলা (জাতীয় সঙ্গীত) গেয়ে শোনাতেন। অসাধারণ হতো। আবার হরিপদ স্যারও খুব ভালো গান করতেন। তার হাতের লিখা অসাধারণ ছিলো। আমি তার হাতের লিখার মতো লিখা আজও কোথাও দেখিনি।

তবে আমি খানিকটা স্যারের মতো করে লিখতে পারতাম। কতো কতো স্মৃতি – যা ভুলে যাওয়ার মতো নয়। আজ আর কেউ নেই ওই স্কুলে। সবাই নতুন শিক্ষক বর্তমানে। তবে হরিপদ স্যার আছেন ওই এলাকার পাশের একটি প্রাইমারী স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে। শ্রদ্ধেয় শাহ জামাল স্যার বেঁচে আছেন কিনা জানি না। কোন যোগাযোগ নেই। আমি ঢাকায় থাকি, একটি স্বনামধন্য ওষুধ কোম্পানীতে চাকরি করি। আর তাই অনেকের সাথেই যোগাযোগ সীমিত। এটা বড়ই দুঃখজনক। অনেকের কাছেই আমি ক্ষমাপ্রার্থী।

তো সবাই ভালো থাকবেন। অন্য একদিন আবার আসবো আমার আরও অনেক কথা নিয়ে। অসাধারণ সব স্মৃতিগুলো মনে করবো। আপনাদের জীবনে ঘটে যাওয়া স্মৃতিগুলো আমাকে ইমেইলে পাঠাতে পারেন, কমেন্ট করতে পারেন। আমি প্রকাশ করবো ইনশাআল্লাহ।

আরও পড়ুন: সভ্য জাতি যখন অসভ্য হয়ে যায় – পরিস্থিতি কেমন হয়

শেয়ার করুন :)

Leave a Reply

Scroll to Top